বেইলি রোডে ভবনে আগুন লেগে নিহত বুয়েটের শিক্ষার্থী নাহিয়ান আমিনের লাশ দেখে কাঁদছেন তাঁর বাবা রিয়াজুল আমিন। শুক্রবার বরিশাল নগরের পলিটেকনিক কলেজ রোডে
একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে বাকপ্রতিবন্ধী বাবা রিয়াজুল কবির নির্বাক। অসুস্থ মা–ও ছেলে বুয়েটের শিক্ষার্থী নাহিয়ান আমিনের মৃত্যুতে শুধু কাঁদছেন আর বুক চাপড়াচ্ছেন। বৃহস্পতিবার রাত থেকেই কোনো দানাপানি মুখে নেননি বাবা-মা। তাঁরা বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না তাঁদের একমাত্র ছেলে আর ফিরবেন না। কথা ছিল ঈদের ছুটিতে ছেলে বাড়িতে আসবেন। কিন্তু সেই আসা এলেন, কিন্তু জীবিত নয়, লাশ হয়ে।
এই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান বরগুনার আরেক তরুণ নাঈম। দরিদ্র পরিবারের নাঈমও মা–বাবার একমাত্র ছেলে। পরিবারের অসচ্ছলতা ঘোচাতে এবং নিজের পড়াশোনার খরচ জোটাতে নাঈম কাচ্চি ভাই রেস্তোরাঁয় নিরাপত্তারক্ষীর (সিকিউরিটি গার্ড) চাকরি নিয়েছিলেন তিন দিন আগে। শুক্রবার বিকেলে নাঈম লাশ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। তাঁর পরিবারেরও চলছে মাতম।
রাজধানীর বেইলি রোডে বহুতল ভবনে আগুনে দগ্ধ হয়ে বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান নাহিয়ান ও নাঈম। নাহিয়ানের বাড়ি বরিশাল নগরের উত্তর আলেকান্দা এলাকায়। নাঈমের বাড়ি বরগুনা সদর উপজেলার গৌরীচন্না ইউনিয়নের মো. নান্টু হাওলাদারের ছেলে।
নাহিয়ানদের প্রতিবেশী বরিশাল সিটি করপোরেশনের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর লিয়াকত হোসেন খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘নাহিয়ান অত্যন্ত মেধাবী ও নম্রভদ্র হিসেবে এলাকায় পরিচিত ছিল। তারা দুই ভাইবোনই মেধাবী। বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে অকালে নাহিয়ান আমাদের ছেড়ে চলে গেছে।’
শুক্রবার দুপুরে নাহিয়ানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে আত্মীয়স্বজনের মধ্যে মাতম চলছে। তাঁদের কান্নায় প্রতিবেশী ও উপস্থিত কেউই কান্না চেপে রাখতে পারছিলেন না।
দুই ভাইবোনের মধ্যে ছোট নাহিয়ান ঢাকার বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। একমাত্র বোন মালিহা মেহনাজ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্রী।
নাহিয়ানের লাশ শুক্রবার দুপুরে বরিশালে নিয়ে আসা হয়। লাশ এসে পৌঁছানোর পর কান্না-আহাজারিতে এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। শুক্রবার বাদ আসর নগরের পলিটেকনিক জামে মসজিদে নাহিয়ানের জানাজা শেষে দাফন করা হবে।
-ADVERTISEMENT-

0 Comments